মধুমিতা হলের অবসান, আরো একটি সিনেমা হলের সমাপ্তি

ঢাকার সিনেমা প্রেমীদের জন্য এটি এক নস্টালজিক ও বেদনাদায়ক মুহূর্ত... চিরতরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ৫৬ বছরের ঐতিহ্যবাহী মধুমিতা হল। দর্শকশূন্যতা ও লাগাতার লোকসানের কারণে অবশেষে হলটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মধুমিতা সিনেমা হল নিয়ে আরো কিছু বিস্তারিত তথ্য নিচে তুলে ধরা হলো...

মধুমিতা সিনেমা হল বন্ধের কারণ, বাংলাদেশের পুরোনো সিনেমা হলগুলোর অবস্থায

শেষ প্রদর্শনী ও হল বন্ধের কারণ

সর্বশেষ গত নভেম্বরে ‘দরদ’ সিনেমা মুক্তি পায় মধুমিতায়। তারপর দুই মাস ধরে বন্ধ পড়ে আছে এই হল। কোনো নতুন সিনেমা মুক্তি না পাওয়ায় স্টাফদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে হলের কর্ণধার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাবেক সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ ঘোষণা দিলেন - এবারের ঈদেই শেষবারের মতো সিনেমা চালানো হবে, এরপর চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলটি।

তিনি বলেন, "দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে সিনেমা চালিয়ে আসছি, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে গেছে। দর্শক নেই, ব্যবসায়িক ক্ষতি প্রতিনিয়ত বাড়ছে, পাশাপশি সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো উত্তরণের উদ্দ্যোগ বা সহায়তা নেই। তাই বাধ্য হয়েই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে।"

বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংকট

শুধু মধুমিতা হল নয়, দেশের এক সময়কার জমজমাট সিনেমা হলগুলোর অনেকগুলোই এখন বিলুপ্তির পথে। দর্শক কমে যাওয়ায় শুধু সিঙ্গেল স্ক্রিন নয়, মাল্টিপ্লেক্স হলগুলোর অবস্থাও তেমন ভালো নয়। ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, "উৎসব ছাড়া এখন আর কেউ সিনেমা হলে আসে না। দেশি-বিদেশি কোনো সিনেমাই এখন ঠিকভাবে ব্যবসা করছে না। মাল্টিপ্লেক্সেও দর্শক সংকট দেখা দিচ্ছে।"


ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: মধুমিতার জায়গায় কি মাল্টিপ্লেক্স হবে?

মধুমিতা হল বন্ধ হওয়ার পর কী হবে, সে প্রসঙ্গে নওশাদ জানান, হলটি ভেঙে এখানে একটি বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। যদি সম্ভব হয়, ভবিষ্যতে এই ভবনের মধ্যেই একটি মাল্টিপ্লেক্স গড়ে তোলা যেতে পারে।

একটি সিনেমা ঐতিহ্যের সমাপ্তি

১৯৬৭ সালের ১ ডিসেম্বর পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান মধুমিতা হলের উদ্বোধন করেছিলেন। এরপর বহু বছর এটি ঢাকার সিনেমা দর্শকদের বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে হলটির অস্তিত্ব রক্ষা করা সম্ভব হলো না।

এই বন্ধ হয়ে যাওয়া শুধু একটি সিনেমা হলের নয়, বরং এটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সমাপ্তি। মধুমিতার পরিণতি যেন দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান বাস্তবতাকেই তুলে ধরছে।

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)

নবীনতর পূর্বতন