ইভটিজিংয়ের শিকার হলে যা করবেন? আপনার জন্য একটি সম্পূর্ণ গাইডলাইন

ইভটিজিং বা নারী উত্ত্যক্তকরণ বাংলাদেশে একটি ক্রমবর্ধমান সামাজিক সমস্যা। রাস্তা, গণপরিবহন, কর্মক্ষেত্র এমনকি অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও নারীরা এই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন।

আসুন জেনে নিই ইভটিজিংয়ের শিকার হলে কী করবেন এবং কী করবেন না:


ইভটিজিং হলে কোথায় অভিযোগ করবেন, বাংলাদেশে ইভটিজিংয়ের শাস্তি কী

১. শান্ত থাকুন ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন

⦿ প্রথমেই নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।
⦿ সম্ভব হলে লোকালয় বা আলোকিত স্থানে চলে যান।

২. জোরে প্রতিবাদ করুন

⦿ "আমাকে বিরক্ত করবেন না" বা "সাহায্য করুন" বলে চিৎকার করুন।
⦿ গণপরিবহনে হলে কন্ডাক্টর/ড্রাইভারকে জানান। যদি পারেন আপনার পাশে থাকা কোনো ম্যাচিউরড পারসন থেকে সাহায্য নিন।

৩. যথাসম্ভব প্রমাণ সংগ্রহ করুন

⦿ গোপনে ভিডিও বা অডিও রেকর্ড করুন।
⦿ উত্ত্যক্তকারীর ছবি, গাড়ি নম্বর বা পরিচয় নোট করুন।
⦿ সাক্ষীদের পরিচয় ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করুন।

৪. অভিযোগ দায়ের করুন

⦿ নিকটতম থানায় জিডি/এফআইআর করুন। এই বিষয়ে জরুরি হেল্পলাইন নম্বর:
• পুলিশ: 999 টোল-ফ্রি, 01999109333
• নারী ও শিশু সহায়তা: 109 টোল-ফ্রি
• সাইবার ক্রাইম হটলাইন নম্বর: 333 টোল-ফ্রি, 01320026997, 0132000888
• কিশোর-কিশোরীদের সাইবার অপরাধ রোধে হেল্পলাইন নম্বর: 13219 টোল-ফ্রি

৫. ইভটিজিংয়ের শিকার কর্মক্ষেত্রে হলে

⦿ প্রতিষ্ঠানের এইচআর বা উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষকে জানান।
⦿ প্রতিষ্ঠানের মালিক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করুন।

৬. বাংলাদেশে ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা

⦿ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৫০৯ ধারা অনুযায়ী ইভটিজিং শাস্তিযোগ্য অপরাধ যার শাস্তি ১ বছর কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়দন্ড। সাইবার ইভটিজিংয়ের জন্যও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রযোজ্য।

ইভটিজিংয়ের শিকার হলে যা করবেন না...

• একা একা কথা কাটাকাটিতে জড়াবেন না।
• নিজে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।
• ঘটনা চেপে রাখবেন না বা লজ্জা পাবেন না।
• শুধু সামাজিক মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না।
• মারামারি বা হাতাহাতিতে জড়াবেন না।

বিশেষ পরামর্শ:

• নিকটস্থ নারী সংগঠন বা আইনি সহায়তা কেন্দ্রের সাহায্য নিন।
• নিয়মিত পথচলার সময় নিরাপত্তা অ্যাপ ( যেমন: SafeTrac, Nirbhaya) ব্যবহার করুন।
• বন্ধু বা পরিবারের সদস্যদের সাথে আপনার লোকেশন, হোটেলে থাকলে তাহার তথ্য এবং যানবাহনের নাম্বার ও অন্যান্য তথ্য শেয়ার করে রাখুন।


মনে রাখবেন, ইভটিজিং কোনো সামাজিক সমস্যা নয়, এটি একটি অপরাধ। আপনার নীরবতা অপরাধীকে আরো উৎসাহিত করবে। বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে প্রতিবাদ করুন এবং আইনি ব্যবস্থা নিন। বাংলাদেশে প্রতিদিন হাজারো নারী ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু মাত্র কয়েকটি ঘটনাই আইনের আওতায় আসে। আপনার সচেতনতা ও সক্রিয়তা এই অবস্থা পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।

"নিরাপত্তা আপনার অধিকার, চুপ করে সহ্য করা কোনো সমাধান নয়"

প্রযুক্তির বিশ্ব ব্লগে প্রকাশিত "ইভটিজিংয়ের শিকার হলে কি কি করবেন" গাইডলাইনটি শেয়ার করে অন্য নারীদেরও সচেতন করুন। সচেতন হয়ে একসাথে আমরা একটি নিরাপদ সমাজ গড়ে তুলতে পারি। ভাল থাকুন।

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)

নবীনতর পূর্বতন