মৃত ব্যক্তির কপালে চুমু দেওয়া যাবে কি, ইসলাম কি বলে?

মৃত্যু আমাদের জীবনের এক অনিবার্য বাস্তবতা। প্রিয়জনের মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই বিচলিত এবং মনক্ষুন্ন হয়ে পড়ি আমরা। কিন্তু ইসলাম এই শোক প্রকাশের জন্য কিছু সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। চলুন জেনে নেই, মৃত ব্যক্তির কপালে চুমু দেওয়া ইসলামে জায়েজ কি না - এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা।


মৃত ব্যক্তির কপালে চুমু দেওয়া ইসলামে কি জায়েজ, ইসলামে শোক প্রকাশের সঠিক পদ্ধতি কি

ইসলামে শোক প্রকাশের সীমারেখা

ইসলাম মৃত্যুতে শোক প্রকাশের অনুমতি দেয়, তবে তা যেন সীমা অতিক্রম না করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:

"যে ব্যক্তি শোকে চিৎকার করে, জামা ছিঁড়ে বা জাহিলিয়াতের মতো আচরণ করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।"
(বুখারি: ১২৩৫, মুসলিম: ২৯৬)

অর্থাৎ, অতিরিক্ত শোক প্রকাশ (যেমন: চিৎকার করা, বুক চাপড়ানো) ইসলামে নিষিদ্ধ। তবে স্বাভাবিকভাবে কান্না করা বা আবেগপ্রবণ হয়ে মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া জায়েজ।

মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া কি জায়েজ?

হ্যাঁ, ইসলামে মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া জায়েজ, তবে কিছু শর্তসাপেক্ষে:

পুরুষদের জন্য: মৃত পুরুষ আত্মীয় (যেমন: বাবা, ভাই) বা ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া যায়।
নারীদের জন্য: মৃত নারী আত্মীয় (যেমন: মা, বোন) বা মাহরাম নারীকে চুমু দেওয়া যায়।

প্রমাণ:
১. আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) মৃত উসমান বিন মাজউনকে চুমু দিয়েছিলেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩১৬৩)
২. আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর মুখমণ্ডল চুম্বন করেছিলেন। (বুখারি: ৪৪৫৭)

অনুমতি নেই:
১. অমাহরাম নারী-পুরুষের জন্য মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া হারাম।
২. অতিরিক্ত আবেগে মৃতের মুখে বা শরীরে চুমু দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

ইসলামী স্কলারদের মতামত

শায়খ বিন বাজ (রহ.) বলেন:

"মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়াতে কোনো সমস্যা নেই, যদি তা মাহরাম আত্মীয়ের ক্ষেত্রে হয়। যেমনটি আবু বকর (রা.) নবী (সা.)-এর সাথে করেছিলেন।"
(মাজমুউল ফাতাওয়া: ১৩/১০২)

কীভাবে শোক প্রকাশ করবেন ইসলামিকভাবে?

১. ধৈর্য ধারণ করুন: আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর কাছেই ফিরে যাব।" (সুরা বাকারা: ১৫৬)
২. দোয়া ও ইস্তিগফার করুন: মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
৩. সদকা করুন: মৃতের রুহের মাগফিরাতের জন্য দান-সদকা করা উত্তম।

এই বিষয় সংক্রান্ত আরো কিছু প্রশ্ন:

১. মৃত শিশুকে চুমু দেওয়া যাবে কি? হ্যাঁ, পিতামাতা বা নিকটাত্মীয়ের জন্য শিশুকে চুমু দেওয়া জায়েজ।
২. কবরে যেয়ে মৃতকে চুমু দেওয়া কি ঠিক? কবর জিয়ারতের সময় শুধু দোয়া করা উচিত, চুমু দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৩. মৃত ব্যক্তির ছবিতে চুমু দেওয়া কি জায়েজ? না, এটি ইসলামে অনুমোদিত নয়।


শেষ কথা: ইসলামের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলাম প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি জীবনব্যবস্থা। এটি আমাদের আবেগকে স্বীকৃতি দেয়, কিন্তু তা যেন অসংযত না হয় সে নির্দেশনাও দেয়। মৃত ব্যক্তিকে চুমু দেওয়া জায়েজ, তবে তা যেন শরীয়তের সীমার মধ্যে থাকে। তাই ইসলামী বিধান মেনে চলুন, অযথা শোক প্রকাশ থেকে বিরত থাকুন। প্রযুক্তির বিশ্ব ব্লগে এই ইসলাম বিষয়ে পোস্টটি পড়ার জন্য আপনাকর ধন্যবাদ।

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই পোস্টটির সম্পর্কে আপনার মতামত, প্রশ্ন অথবা কিছু জানতে বা জানাতে চাইলে অনুগ্রহ করে নিচে আপনার মন্তব্যটি লিখুন।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুন (0)

নবীনতর পূর্বতন